আর্থিং পদ্ধতির কার্যকারীতা নির্ভর করে সর্বনিম্ন আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মানের উপর। আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলতে সম্পূর্ণ আর্থিং পদ্ধতির রেজিস্ট্যান্সকে বোঝায়। বাড়ি ঘর, ওয়ার্কশপ, কলকারখানার মেইন আর্থ টার্মিনাল থেকে আর্থ ইলেকট্রোডের মাধ্যমে যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় তাকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। অর্থাৎ আর্থ লিড এবং আর্থ ইলোকট্রোডের মোট রেজিস্ট্যান্সকেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল করার পর অথবা পুরাতন আর্থিং সিস্টেমের আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা খুবই জরুরি। আর্থিং সিস্টেম সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তা নিম্নলিখিত যে কোন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
১। মেগার আর্থ টেস্টার পদ্ধতি ও ২। টেস্ট ল্যাম্প পদ্ধতি
১। মেগার আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাণ: মেগার আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ ইলেকট্রোডের রেজিস্ট্যাপ মাপা হয়। এতে তিনটি টার্মিনাল থাকে। আর্থ টার্মিনাল (E), পটেনশিয়াল টার্মিনাল (P) এবং কারেন্ট টার্মিনাল (C) (চিত্র-২.৬)। যে আর্থ ইলেকট্রোড এর রেজিস্ট্যান্স মাপতে হবে তার সঙ্গে E টার্মিনাল কানেকশন করতে হবে। এবার দুইটি স্পাইক নিয়ে একই লাইনে ঐ আর্থ ইলেকট্রোড হতে ২০ থেকে ২৫ মিটার
পর পর দূরে মাটিতে পুঁততে হবে। প্রথমটির অর্থাৎ আর্থ ইলেকট্রোড এর নিকটবর্তী স্পাইককে P টার্মিনালের সাথে এবং পরবর্তী দ্বিতীয়টির সাথে C টার্মিনাল সংযোগ করতে হবে। এবার মেগারের হাতলের সাহায্যে জেনারেটরকে ঘুরালে E হতে মাটির মধ্য দিয়ে C তে পরবর্তী কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এই কারেন্টকে ধরলে এবং E হতে P পর্যন্ত ভোল্টেজকে V ধরলে E হতে P পর্যন্ত আর্থের রেজিস্ট্যান্স হবে , এই R এর মান অবশ্য আর্থ টেস্টারে সরাসরি রিডিং পাওয়া যাবে। টেস্ট পদ্ধতিটি ২.৬ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। এভাবে মাঝের স্পাইককে একই লাইনে ১.৫ মিটার হতে ৩ মিটার যথাক্রমে আর্থ ইলেকট্রোডের নিকট ও দূরে সরিয়ে পুঁতে আরও দুইটি রিডিং নিতে হবে। তারপর মোট তিনটি রিডিং এর গড় মানকে আর্থের রেজিস্ট্যান্স ধরা হবে। কিন্তু জনবহুল শহরে যেখানে P এবং C স্পাইক পোঁতার জায়গা নেই। সেখানে আর্থ টেস্টারের P ও C টার্মিনাল দুইটিকে শর্ট করে তার সংগে একটি লিডিং তার সংযোগ করে পানির পাইপের সংঙ্গে সংযোগ করতে হবে। এবার হাতল ঘুরিয়ে আর্থ টেস্টারের রিডিং নিতে হবে। অতঃপর E টার্মিনালের সাথে P এবং C এর লিডিং তার সংযোগ করে পুণরায় রিডিং নিতে হবে। প্রথম রিডিং হতে দ্বিতীয় রিডিং বাদ দিলে আর্থ রেজিস্ট্যান্স এর মান পাওয়া যাবে। টেস্ট করার সময় সতর্ক হতে হবে যেন আর্থ ইলেকট্রোড ও স্পাইক কাছাকাছি না থাকে।
আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের সময় যেসব সাবধানতা মানতে হবে সেগুলো হলো- ১। টার্মিনাল সংযোগ শক্তভাবে দিতে হবে যাতে ঢিলা (Lose) না থাকে।
২। সাহায্যকারী স্পাইক মাটির মধ্যে ১ মিটার পর্যন্ত পুঁততে হবে।
৩। আর্থ টেস্টারের পাঠ সাবধানতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।
৪। রেজিস্ট্যান্সের মান সন্তোষজনক কিনা তা প্রতি বছর অন্তত একবার পরীক্ষা করা উচিত
২. আর্থ টেস্টিং বাতি দিয়ে আর্থ রেজিস্ট্যাল পরীক্ষা করা।
আর্থ টেস্টার ছাড়াও আর্থ টেস্টিং বাতি দিয়ে খুব সহজে আর্থিং এর কার্যকারিতা জানা যায়। এক্ষেত্রে টেস্ট বাতির এক প্রাপ্ত সাপ্লাইয়ের সাথে এবং অন্য প্রাপ্ত আর্থিং এর সাথে সংযোগ করলে বাতি যদি ভালোভাবে জ্বলে তবে বোঝা যাবে আর্থিং ঠিকভাবে কাজ করছে না। যদি আর্থ কানেকশন থেকে কিছু দূরে ঠাণ্ডা পানির পাইপ বা অন্য কোনো আর্থ করা জিনিস পাওয়া যায় যার রেজিস্ট্যান্স খুব কম তাহলে ভোল্টমিটার এবং অ্যামিটার দিয়ে আর্থ কানেকশনের রেজিস্ট্যান্স বের করা যাবে। প্রক্রিয়াটি ২.৭ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। পানির পাইপ আর আর্থ-
কানেকশনের সঙ্গে একটি অ্যামিটারের দুইপ্রান্ত সংযোগ করে অল্টারনেটিং কারেন্ট প্রবাহিত করতে হবে। এরপরপানির পাইপ ও আর্দ্র কানেকশনের মধ্যেকার বিভব পার্থক্য (ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হবে।
এখন যদি পানির পাইপের রেজিস্ট্যান্স অতি নগন্য হয়, তবে মাটির রেজিস্ট্যান্স = ভোল্টেজ/ কারেন্ট
কোনো পদার্থই রেজিস্ট্যান্স শূন্য হয় না। একারণে একেবারে রেজিস্ট্যান্স বিহিন কানেকশন দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই প্রক্রিয়ায় আর্থ রেজিস্ট্যান্স মাপার সময় ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডি.সি) ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইলেকট্রিফিকেশনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে আর্থ রেজিস্ট্যান্স সর্বনিম্ন ১ ওহম এবং সর্বোচ্চ ৫ ওহম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। বড় বড় মিল ফ্যাক্টরিতে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ১ ওহম এর কম হওয়া উচিত। পাহাড়ি এলাকায় আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান ৮ ওহম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
Read more